ডেস্ক নিউজ:
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কাউন্সিলে গত ৩ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সাতজন, ফেঞ্চুগঞ্জের দুজন, দক্ষিণ সুরমার একজন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের ৫ জন এবং ছাতক উপজেলার একজনসহ ১৬ প্রবাসী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জন পুনঃনির্বাচিত ও ৬ জন প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছেন। প্রবাসী অধ্যুষিত বৃহত্তর সিলেটে এ নিয়ে সর্বত্র আনন্দের বন্যা বইছে।

বিশ্বনাথের হাজারীগাঁও গ্রামের মনোয়ার হোসেন ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম এশিয়ান কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টির যে সূচনা করেছিলেন তার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশি উত্তরসূরীরা এখনও অব্যাহত রেখেছেন।

এরই অংশ হিসেবে বিশ্বনাথের আয়েশা চৌধুরী রাখি প্রথম বিশ্বনাথী নারী হিসেবে ১৯৯৪ সালে নিউহাম কাউন্সিলে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর ২০০৪ সালে ওল্ডহাম মেট্রোপলিটন বার কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন বিশ্বনাথের আব্দুল জব্বার।

২০০৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন বিশ্বনাথের রোশনারা আলী। পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে বিলেতের মাটিতে বাংলাদেশকে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বিশ্বনাথের পল্লীগাঁয়ে জন্ম নেয়া রোশনারা আলী।

গত ৩ মে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক বিশ্বনাথের সাতজনসহ সিলেটের ১৬ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তারমধ্যে ১০ জন পুরুষ ৬ জন নারী।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার রাজনপুর গ্রামের মো. মোর্শেদ আলমগীরের মেয়ে সুফিয়া আলম তানিয়া টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পপলার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। একই উপজেলার ইলাশপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রেডব্রিডের ক্লেহল ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি গ্রামের ফখরুল ইসলামের মেয়ে মানসিয়া উদ্দিন লন্ডনের মার্সি সাইড ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের উত্তর ধর্মদা গ্রামের শেখ সিরাজুল ইসলাম এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বেথনালগ্রীণ ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র।

উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামের আয়েশা চৌধুরী রাখি এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো নিউহাম কাউন্সিলের বেকটন ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের করপাড়া গ্রামের আব্দুল মালিক এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ওল্ডহাম কাউন্সিলের কোল্ড হার্সট ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের ধরারাই গ্রামের চ্যাটার্ড একাউন্টেন্ট মোহাম্মদ আয়াছ মিয়া এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এসটি ডানসটানস্ ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার।

উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাহাড়া দুবাগ গ্রামের ব্যারিস্টার নাজির আহমদ প্রথমবারের মতো নিউহাম কাউন্সিলের ইলফোর্ড ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের ইলামের গাও গ্রামের শাহ সুহেল আমিনও এবারই প্রথম টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের হোয়াইট চ্যাপেল ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিশ্বনাথ উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের রজকপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামও সাউথ ওয়ার্ক থেকে প্রথমবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার বৃটেনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সৈয়দপুরের তিন জন দ্বিতীয়বারের মতো ও একজন প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এরা হলেন, সৈয়দপুর গ্রামের সৈয়দ অালী অাহমদ প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দপুর গ্রামের লিমা কোরেশী, শামছিয়া অালী ও সায়মা অাহমদ।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুরের বাসিন্দা আমেরিকা প্রবাসী সৈয়দ শিব্বির আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, অামার জানা মতে সৈয়দপুর গ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সৈয়দ অালী অাহমদ ও লিমা কোরেশীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এবার চারজনকে অামরা একসঙ্গে পেয়েছি। তারা লন্ডনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয়ী হলেও দেশের বাড়িতে শিক্ষা-চিকিৎসা রাস্তা-ঘাটসহ সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে তাদের হাত আরও প্রসারিত হবে এ প্রত্যাশা সৈয়দপুরবাসীর।

জগন্নাথপুর উপজেলার আহবাব হোসাইন টাওয়ার হেমলেটসের বেথনাল গ্রিন ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের সাকির রহমান সেন্ট আলবান্সের সাউথ সপয়েল ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।